ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

সরকারি চিকিৎসকরা নিজ কর্মস্থলের বাইরে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারবে না : প্রধানমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক ::   প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারি চিকিৎসকরা নিজ কর্মস্থলের বাইরে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারবেন না। যে হাসপাতালে তারা নিযুক্ত থাকবেন, সেখানেই নির্ধারিত সময়ের পরে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করার ব্যবস্থা রাখা হবে। এতে জরুরি প্রয়োজনে ডাক্তারদের হাসপাতালেই পাওয়া যাবে।

মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় মানিকগঞ্জে কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ ও ৫০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন।

শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পাঁচ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এম মান্নান একনেকে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্প ও প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন নির্দেশনার বিষয়ে অবহিত করেন।

তিনি জানান, চিকিৎসকরা গ্রামে যেতে চান না। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী বিরক্ত। তিনি ক্ষোভ, অভিমান ও দুঃখের সঙ্গে এ কথাগুলো বলেছেন। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) মনে করেন, ডাক্তাররা যেখানে চাকরি করেন, সেখানে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করলে সরকারি হাসপাতালের রোগীদের জন্য কিছুটা ভালো হবে।

উপজেলা পর্যায়ে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের অনুপস্থিতির ঘটনায় বিভিন্ন মহল প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সমালোচনা করে। অনেকে মনে করছেন, যতদিন প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সুযোগ রাখা হবে, ততদিন সরকারি হাসপাতালে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা যাবে না। চিকিৎসকদের গ্রামে থাকতে বাধ্য করতে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে সরকারি নির্দেশনা এবং অবকাঠামোগত ও অন্যান্য সুবিধা বাড়ানোর উদ্যোগও নেওয়া হয়। তবুও উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসকদের অনুপস্থিতির অভিযোগ ব্যাপক।

চলতি বছরের শুরুর দিকে সরকারি চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদনও করা হয়েছিল। সেই রিট আবেদন শুনানি শেষে হাইকোর্ট পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা তৈরিতে একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

বর্তমানে দেশে সরকারি চিকিৎসক আছেন ৩০ হাজার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখনও ১০ হাজার জনগোষ্ঠীর অনুপাতে চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ২৩ জন। গত ১২ বছরে চিকিৎসা ক্যাডারের সংখ্যা চার গুণ বাড়লেও গ্রামের মানুষ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর:

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, সড়কে এলোপাতাড়ি যানবাহন রাখা হয়। এ ছাড়া নিয়ম না মেনে গাড়িগুলো সড়কে চলাচল করে। এতে সড়কে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। চার লেনের প্রশস্ত সড়কেও এ সমস্যা হয়। এ অবস্থায় সড়কের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

একনেক সভায় ‘খুলনা-চুকনগর-সাতক্ষীরা মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ’ প্রকল্প অনুমোদনের সময় সড়কের ভিডিও দেখে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন।

এম এ মান্নান জানান, সড়কে যাতে অতিরিক্ত ওজনের পণ্যবাহী (ওভারলোডিং) কোনো যান চলতে না পারে সেদিকে নজরদারি বাড়াতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। নির্ধারিত ওজনের বেশি পণ্যবাহী ট্রাক বা লরির কারণে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে আমাদের অর্থনীতির আকার বাড়ছে। এ পর্যায়ে ওভারলোডিং পুরোপুরি এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। যথাসম্ভব তদারকি জোরদার করে এটি কমিয়ে আনা সম্ভব।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী দেশে সব মহাসড়কে, চালক ও হেলপারদের (চালকের সহকারী) জন্য সড়কের পাশে আধুনিক বিশ্রামাগার নির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, একনেকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় চার মহাসড়কের পাশে পণ্যবাহী গাড়ি চালকদের জন্য বিশ্রামাগার নির্মাণের একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশে সব মহাসড়কে চালক-হেলপারদের জন্য এ সুবিধা রাখা হবে। সরকার শুধু বিশ্রামাগারের জন্য জায়গা দেবে। দোকান-খাবারের হোটেলসহ অন্যান্য সুবিধার ব্যবস্থা করতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুযোগ দেওয়া হবে।

একনেক সভায় বান্দরবানে আলীকদম থেকে পোয়ামুহরী পর্যন্ত সড়ক নির্মাণের একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধস ঠেকাতে সড়কের দু’পাশে গাছ লাগানোর পরামর্শও দিয়েছেন।

এদিকে প্রকল্পের ক্ষেত্রে ওভারল্যাপিং যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। একই কাজের জন্য ভিন্ন ভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগ যেন একাধিক প্রকল্প না নেয়। চট্টগ্রামের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভবন নির্মাণের সময় প্রতিটি ভবনে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ ছাড়া নোটিশের মাধ্যমেও সংশ্নিষ্টদের জানিয়ে দেওয়া হয়।

একনেকে অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পগুলো হলো- বেনাপোল স্থলবন্দরে কার্গো ভেহিকল টার্মিনাল নির্মাণ, বড়তাকিয়া থেকে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল সংযোগ সড়ক নির্মাণ (দ্বিতীয় সংশোধিত), উত্তরা এলাকায় পয়ঃশোধনাগার নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ, ইসিবি চত্বর থেকে মিরপুর পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন এবং কালশী মোড়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত), সমতল ভূমিতে বসবাসরত অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক ও জীবন মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন, পুকুর পুনর্খনন ও ভূ-উপরিস্থ পানি উন্নয়নের মাধ্যমে ক্ষুদ্র সেচের ব্যবহার, বেগম আমিনা মনসুর টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট এবং সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা অঙ্গ-২ পর্যায় (আইএফএমসি-২) প্রকল্প।

পাঠকের মতামত: